ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

ধনাঢ্য হাসিনা, দরিদ্র তানিয়া: চকরিয়া-পেকুয়ার প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণী

নিউজ ডেস্ক ::

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে বিএনপি মনোনীত ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থীনি হাসিনা আহমেদ কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। প্রাতিষ্ঠানিক হিসেবে এই আসনের সবচেয়ে ধনাঢ্য প্রার্থীনি তিনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শুধু চাকরি করেই আয় করেন সাড়ে ৫৫ লাখ টাকা। চাকরিসহ ওই সময়ের মধ্যে তাঁর আয় ছিলো ৭৯ লাখ ৯ হাজার ৫’শ ৩৫ টাকা। এ ছাড়া তাঁর এবং স্বামী সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ’র নামে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ রয়েছে ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এই দম্পতির নামে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ফ্ল্যাট বাড়িসহ বিপুল পরিমাণ কৃষি এবং অকৃষি জমি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় এমন তথ্যই দিয়েছেন হাসিনা আহমেদ।
শুধু আর্থিকভাবে স্বচ্ছলই নন। বিলাসী জীবন যাপনেও অভ্যস্ত হাসিনা আহমেদ। পরিবারের ৫ সদস্যের ব্যবহারের জন্য রয়েছে ৫টি গাড়ি। এসব গাড়ির মধ্যে ২টি নিজের নামে এবং ৩টি স্বামীর নামে কেনা। হাসিনা আহমেদ’র হলফনামা পড়ে জানা গেছে, তিনি ৬৯ লাখ ৬১ হাজার টাকার বিনিময়ে ৬দশমিক ১০ একর কৃষি জমি কিনেন। অন্যদিকে স্বামী সালাহ্উদ্দিন আহমেদ কিনেন ২ কোটি ৬৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ২৪ একর কৃষি জমি।
ঢাকার পূর্বাচলে হাসিনা আহমেদ’র রয়েছে ৩ কাঠা জমি এবং নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে রয়েছে ১ একর ৩২ শতক জমি। কক্সবাজার শহরে রয়েছে মেরিন প্লাজা নামে একটি আবাসিক হোটেল। যেটি নির্মাণ করতে ব্যয় করেছেন প্রায় ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে স্বামী সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ্উদ্দিন আহমেদ তাঁর নামে থাকা পেকুয়ার বাড়িটি নির্মাণ করতে ব্যয় করছেন প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা। ঢাকায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ১ টি ফ্ল্যাট বাড়িও রয়েছে সালাহউদ্দিন আহমেদ’র নামে।
নিজের নামে ব্যবসায় বিনিয়োগ না থাকলেও স্বামী সালাহউদ্দিন আহমেদ’র নামে বিভিন্ন ব্যবসায় রয়েছে বিনিয়োগ। পেকুয়া লাইভ স্টক এন্ড ফিশারিজ এবং বেস্ট মেরিন এন্টারপ্রাইজ নামে দুইটি প্রতিষ্ঠানে সালাহ্উদ্দিন আহমেদ বিনিয়োগ করেছেন ১৭ লাখ টাকা। নির্বাচনী হলফনামায় উল্লিখিত চিত্র প্রদর্শন করেছেন হাসিনা আহমেদ।
অন্যদিকে, স্বতন্ত্র (নির্দলীয়) প্রার্থীনি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের তালিকায় নাম লেখানো তানিয়া আফরিনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা আছে মাত্র ১০ হাজার টাকা। এই আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাফর আলমের কন্যা তিনি। নিজের নামে এখনো পর্যন্ত কোন জমি নেই। উল্লিখিত ১০ হাজার টাকাসহ সম্পদ বলতে তাঁর কাছে আছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দামের ৬ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৫০ হাজার টাকা। সাধারণ মানুষের কাছে ডামি প্রার্থীনি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই নারীও নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী জাফর আলম ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয় করেছেন ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৬’শ ৪৬ টাকা। উল্লেখিত অর্থের মধ্যে তিনি কৃষিখাত থেকে ১৪ লাখ ১০ হাজার, ব্যবসা থেকে ৩ লাখ এবং শেয়ার, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থেকে আয় করেন ২৪ হাজার ৬’শ ৪৬ টাকা। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাফর আলম’র ব্যাংকের চেয়ে নগদ টাকা রয়েছে বেশি। তাঁর কাছে নগদ টাকা আছে ৪১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার অধিক। স্ত্রীর কাছে রয়েছে ১০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জাফর আলমের নামে রয়েছে ১ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এছাড়াও জাফর আলমের নিজের নামে সঞ্চয় বীমা রয়েছে ২৪ হাজার ৬৪৬ টাকার। ২০ লাখ টাকা দামের একটি আবাসিক ভবনের মালিকও তিনি। ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে রাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে ২০ একর চিংড়ি চাষযোগ্য জমির ইজারা নিয়েছেন।
জাফর আলমের নামে অন্যান্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা দামের দশমিক শূন্য ২৪ শতক এবং স্ত্রীর নামে দশমিক শূন্য দুই শূন্য শতক কৃষি জমি। অকৃষি জমির মধ্যে ১৬ লাখ টাকা মূল্যের দশমিক শূন্য ৬৯ শতক জমি নিজ নামে এবং স্ত্রীর নামে রয়েছে ত্রিশ লাখ টাকা দামের দশমিক শূন্য ৩০ শতক জমি। এ ছাড়া তাঁর নামে সাড়ে ১০ লাখ টাকা দামের একটি পাজেরো জিপ, ফ্রিজ, টেলিভিশন, ল্যাপটপের মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্র রয়েছে ২ লাখ টাকা দামের এবং খাট, আলমিরা, সোফার মতো আসবাবপত্র রয়েছে ১ লাখ টাকার।
জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এই আসনের বর্তমান সংসদ-সদস্য মোঃ ইলিয়াছ। তিনি বছরে আয় করেন ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। উল্লেখিত আয়ের মধ্যে কৃষিখাত থেকে ৭০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৩ লাখ এবং সম্মানি ভাতা হিসেবে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা পান তিনি।
তাঁর কাছে নগদ টাকা রয়েছে ২ লাখ এবং স্ত্রীর কাছে রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এবি ব্যাংকে তাঁর নামে জমা রয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা এবং ইউসিবিএল ব্যাংকে প্রায় দেড় লাখ টাকা। এ ছাড়া ৪৩ লাখ টাকা দামের একটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, ১ লাখ টাকার বৈদুতিক যন্ত্রপাতি এবং ১ লাখ টাকার আসবাবপত্রের মালিক তিনি। তাঁর নামে এক লাখ টাকা মূল্যের ৮ একর (২০ কানি), প্রায় ৫৬ লাখ টাকা দামের ২ তলা ভবন রয়েছে। ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে রাষ্ট্রের কাছ থেকে ২০ একর চিংড়ী জমির ইজারা নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেন।
অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে মুহাম্মদ ফয়সালের বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৫০ হাজার, বশিরুল আলমের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮০ হাজার এবং বদিউল আলমের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় বিষয়টি তাঁরা উল্লেখ করেছেন।

পাঠকের মতামত: